বঙ্গবন্ধুর চৌকস নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। সদ্য স্বাধীন দেশকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করার পাশাপাশি চলে স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টাও। সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে কমনওয়েলথের সদস্যপদ লাভের চেষ্টা করে বাংলাদেশ। কিন্তু বিরোধিতা করে পাকিস্তানসহ বেশকিছু মুসলিম রাষ্ট্র। সরাসরি বিরোধিতা করেন নাইজেরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াকুব গওন।
শুধু তা-ই নয়, তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ তার দেশের বায়াফ্রার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে বলে ভীতসন্ত্রস্ত ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে একটি অপ্রত্যাশিত প্রশ্নও করেন: আচ্ছা বলুন তো অবিভক্ত পাকিস্তান ছিলো একটি শক্তিশালী দেশ। কেন আপনি সেই দেশকে ভেঙে দিতে গেলেন?
স্বভাবসিদ্ধ হাসি দিয়ে বঙ্গবন্ধু তার নীরবতা ভাঙলেন। হাসির ফাঁকেই বঙ্গবন্ধু ঠিক করেছিলেন উত্তরটি। তিনি তর্জনি সংকেতে গম্ভীরভাবে বল্লেন,‘শুনুন মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতি, আপনার কথা হয়তোবা ঠিক। অবিভক্ত পাকিস্তান হয়তো শক্তিশালী ছিলো, তবে তার চেয়েও শক্তিশালী ছিলো অবিভক্ত ভারত; কিন্তু সেসবের চেয়ে শক্তিশালী হতো সংঘবদ্ধ এশিয়া আর মহাশক্তিশালী হতো একজোট এই বিশ্বটি। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি, সবকিছু চাইলেই কী পাওয়া যায়! কথাটি বলেই তিনি তার গলার সাদা চাদরটি হাতে নিয়ে তুলে দিলেন প্রেসিডেন্ট গওনের হাতে।
তিনি বললেন, ‘এই নিন, বাংলাদেশের জনগণের তরফ থেকে আমার এই ক্ষুদ্র উপহার’। তখনও নাইজেরিয়া বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। বঙ্গবন্ধু জোর আশা প্রকাশ করলেন, কমনওয়েলথে সরকারপ্রধানরা, পাকিস্তানিদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং দুই দেশের মাঝে সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা বিষয়ে তাদের চিন্তা সরকারিভাবে ব্যক্ত করবেন।
জ্যামাইকার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ম্যানলি বললেন— তার মতে যুগ্ম ইশতেহারে বাংলাদেশের বক্তব্যটি ব্যক্ত হওয়া উচিত এবং কী ব্যক্ত হবে, তার একটি খসড়া যেন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল প্রেরণ করে। স্বাগতিক দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাইকেল ম্যানলি ছিলেন সেই সম্মেলনের সভাপতি। তার বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই হ্যারল্ড উইলসন বললেন, বাংলাদেশের দাবি ব্রিটেন সর্বান্তকরণে সমর্থন করে। তার ভাষায়, ইতিহাসে এমন কোনো নজির নেই যে, দুই জাতিতে পরিণত একটি রাষ্ট্রের মাঝে যথাযথ বাটোয়ারা হয়নি।
তানজানিয়ার জুলিয়াস নিয়েরের অবশ্য প্রশ্ন করেছিলেন, পাকিস্তান কমনওয়েলথ ক্লাবের সদস্য নয় এবং তাকে জড়িয়ে কোনো প্রস্তাব পাস করা কি ঠিক হবে? বঙ্গবন্ধু তার কালো চশমাটা অপসারণ করে স্থিরদৃষ্টিতে নিয়েরের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি ঠিকই বলেছো জুলিয়াস। কমনওয়েলথ একটি ক্লাব আর আমি সেই ক্লাবের একজন সদস্য। অন্য সদস্যরা যদি সামান্য একটি প্রস্তাব পাস করে আমাকে সাহায্য না করে, তাহলে এই ক্লাবের সদস্য হওয়ার আমার কি-ই বা প্রয়োজন? একটি দরিদ্র দেশের রাষ্ট্রপ্রধান আমি।
কেন তবে অর্ধেক পৃথিবী পেরিয়ে এসেছি এই সম্মেলনে? হেসে জুলিয়াস বলেন, ‘ঠিক আছে মুজিব। তুমি যা চাও, তা-ই হবে’। আলজিয়ার্সের জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বিশ্ব শোষক আর শোষিত— এ দুই ভাগে বিভক্ত। শোষিতকে বাঁচাতে হবে’। কিউবার সে সময়কার প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘মুজিব, শোষকের বিরুদ্ধে এই বাঁচার সংগ্রাম আমারও সংগ্রাম’।
এক পর্যায়ে ফিদেল ক্যাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘সিআইএ সম্পর্কে সাবধান। সুযোগ পেলেই কিন্তু তারা আপনার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে’। তিনি আরও বলেছিলেন,‘দেশের আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, বৈজ্ঞানিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ প্রমুখ পেশার লোকদের সরকারি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করুন।
এরা ভুলের পর ভুল করে সঠিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করবে; কিন্তু এরা কোনো ষড়যন্ত্র করবে না। আপনার মুক্তিযোদ্ধা ছেলেদের আরও কাজের দায়িত্ব দিন এবং সম্পূর্ণভাবে ওদেরকে বিশ্বাস করুন। অন্যথায় আপনি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন’। ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩ সালের সেই সম্মেলনে আরও মতবিনিময় করেন তৎকালীন মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত, কম্বোডিয়ার প্রিন্স সিহানুক ও সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজের সাথে।
আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলন শেষ করে বঙ্গবন্ধু দেশে প্রত্যাবর্তন করেন ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩। কিছুদিন পরই পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উপমহাদেশের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিদের বিচার বাতিল করা হয়। তারপরই আন্তর্জাতিক রেডক্রসের মাধ্যমে পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের প্রথম একটি দল ১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩ ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৪ বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য পাকিস্তানের বেতার সম্মেলন কক্ষ থেকে সরাসরি প্রচার করা হয়: ‘মানুষ এখন বস্তুগত দিক থেকে বৃহত্তর শক্তি অর্জন করেছে, যা সে আর কখনো পারেনি। সে পৃথিবীকে ধ্বংস করার ক্ষমতা অর্জন করেছে। আমরা যুদ্ধের জন্য শক্তি অপব্যবহার করতে দেখেছি, জনগণকে নিপীড়ন করতে দেখেছি। আমরা তাদের ন্যায়সংগত অধিকার অস্বীকার করতে দেখেছি। অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে তাদের ফেলে দিতেও দেখেছি।
আর এসব অকথ্য যাতনার চূড়ান্ত নিদর্শন হয়ে আছে আমাদের ফিলিস্তিনের ভাইয়েরা। আর এ জন্যই অতীতের তুলনায় আজ এই শক্তিকে প্রজ্ঞার সঙ্গে কাজে লাগানোর প্রয়োজন বেশি। এ সম্মেলন শুধু আরব ভাইদের সংগ্রামের প্রতি সমর্থন আমাদের ঐক্য সংহত করার জন্যই নয়, বরং জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের একাত্মতা ঘোষণার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, বর্ণবাদ ও সব ধরনের শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত বিশ্বের নিপীড়িত জনগণের সঙ্গে একাত্মতার ওপর জোর দিতে হবে।
অন্যথায় দখলকৃত আরব ভূমি অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে। আমাদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে জেরুজালেমের ওপর। আল্লাহর কৃপায় আমরা এখন আমাদের সম্পদ ও শক্তি এমনভাবে সুসংহত করতে পারি, যাতে আমাদের সবার জন্য শান্তি ও ন্যায়বিচার অর্জন করা সম্ভব হয়। এই সাফল্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম এক মহান নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তারই গতিশীল নেতৃত্বে বড় দুর্দিনের সময়ও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনচেতা পররাষ্ট্রনীতির জন্য বাংলাদেশ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হওয়া সত্ত্বেও ধীরে ধীরে প্রায় স্বনির্ভরতার দিকে এগোয়। অভ্যুদয়কালে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক পরনির্ভরতা ছিলো, বঙ্গবন্ধু তা কমানোর চেষ্টা করেন। স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ কমনওয়েলথ-১৯৭২, আইএমএফ-১৯৭২, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-১৯৭২, ইউএনসিটিএডি-১৯৭২, আইএলও-১৯৭২, পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংক-১৯৭২, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা-১৯৭২, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা-১৯৭২, জাতিসংঘের স্থায়ী পর্যবেক্ষক-১৯৭২, জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা-১৯৭২, এফএও-১৯৭২, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন-১৯৭২, জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থা-১৯৭২, বিশ্ব ডাক ইউনিয়ন-১৯৭৩, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা-১৯৭৩, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক-১৯৭৩, রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট-১৯৭৩, এসকাপ-১৯৭৩, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা-১৯৭৩, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন-১৯৭৩, ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক-১৯৭৪, জাতিসংঘ-১৯৭৪, ওআইসি-১৯৭৪, আল কুদ্স কমিটি-১৯৭৫, আন্তর্জাতিক পর্যটন সংস্থা-১৯৭৫ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে, যা একটি সদ্য স্বাধীন দেশের জন্য ছিলো অভূতপূর্ব সাফল্য।
বিশ্বের প্রধান শক্তিধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব প্রতিহত করা কঠিন ব্যাপার। ১৯৯২ সালে ঢাকায় আসা মাদক পাচারকারী দণ্ডপ্রাপ্ত মার্কিন তরুণী এলিয়েদা মেকর্ড লিয়াকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। মালয়েশিয়ার মাহাথির অনুরূপ ব্যাপারে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধও রক্ষা করেননি। ইরাক কুয়েত আক্রমণ করলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের পক্ষ সমর্থন করে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সম্মতিতে আমাদের আকাশসীমা, বিমানবন্দর, বিমানঘাঁটি ও সমুদ্রবন্দর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।
১৮ অক্টোবর, ২০০১ সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক সহকারী শফি সামি বলেছিলেন, বাংলাদেশের স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের আলোকে জাতিসংঘ সনদ এবং নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আফগানিস্তানে মার্কিন ও ব্রিটিশ হামলার বিরুদ্ধে ইসলামি দলগুলো অবস্থান নিলেও প্রধান দুই রাজনৈতিক দল কোনো মন্তব্য করেনি তখন। নভেম্বর, ২০০১-এ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন জানায় বিএনপি। কোরিয়া যুদ্ধের কল্যাণে পাটজাতদ্রব্য রপ্তানি করে পাকিস্তান প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বিরাট সুযোগ পায়।
পক্ষান্তরে বাংলাদেশ ওপেকের কারণে পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধিতে বিরাট সংকটে পড়ে। সাধারণ কাপড়কাচা সাবান থেকে টিনের দুগ্ধজাত খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশকে নিয়ে দেশ-বিদেশের বিবিধ তত্ত্ব ও তথ্য নিয়ে গবেষণাযজ্ঞ চলছে, তা কখনো-সখনো আমাদের বিভ্রমের সৃষ্টি করে। পরিসংখ্যান, রেখাচিত্রে ও নানা সারণির মধ্যে আমরা ধাক্কায় পড়ি। ২০০১ সালে অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত বলেছিলেন,‘গত তিন দশকে বাংলাদেশে সরকারিভাবে ঋণ অনুদান হিসেবে আনুমানিক প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক সাহায্য আসে।
এরমধ্যে ৭৫ ভাগ নানাভাবে লুট হয়েছে। সেই ৭৫ ভাগের ২৫ ভাগ বিদেশি কনসালটেন্সির নামে, ৩০ ভাগ আমলা-রাজনীতিবিদ কমিশন এজেন্ট, স্থানীয় পরামর্শক ও ঠিকাদার এবং ২০ ভাগ গ্রাম ও শহরের উচ্চবিত্তদের সাহায্যে ব্যয়িত হয়েছে’। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজের মতে, বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে অথচ এরাই ঝুঁকি মোকাবিলায় সবচেয়ে কম প্রস্তুত। কারণ, তাদের কথা শোনার কেউ নেই। বরং আইএমএফ এদের ঝুঁকিকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করে ভুল পরামর্শকে চাপিয়ে দিয়ে সংকটকে তীব্র করে তোলে।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হলেও চূড়ান্ত সত্য হলো— বাংলাদেশে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, সুস্বাস্থ্য, আর্থিক অসচ্ছলতা, ঊর্ধ্বমুখী অসমতা ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কা এখনো যায়নি। তবুও অধিক জনসংখ্যার ভারে নিপতিত দেশে রোহিঙ্গাদের জেঁকে বসা, সীমান্তে বাংলাদেশিদের নির্যাতন ও হত্যা আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়। রোহিঙ্গা ইস্যু ও ভারত কর্তৃক সীমান্ত হত্যা বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক।
এখানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমাধানে পৌঁছাতে হলে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে সীমান্তে গুলিতে নিহত হয়েছেন ৪২ বাংলাদেশি। আর নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন ছয়জন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিগত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কে উন্নতি ঘটলেও তার প্রতিফলন দেখা যায়নি দুই দেশের সীমান্তে। সীমান্ত হত্যা বন্ধে দুই দেশের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হলেও তাতে পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন ঘটেনি।
অপরদিকে, চার বছর পার হলেও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা চাইলেও জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থা ও দেশ তেমন উদ্যোগ নেয়নি।
সম্প্রতি জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনেও বিষয়টি অমীমাংসিতই থেকে গেল। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে মনে পড়ে তার পররাষ্ট্রনীতি ও উদারচিন্তার কথা। তার উদার পররাষ্ট্রনীতি ও মহান ব্যক্তিত্বই সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশকে যেমন পরিচিত করে তোলে, তেমনই তিনিও হয়ে ওঠেন বিশ্বনেতাদের একজন।
তার মৃত্যুর পর বাংলাদেশে এমন কোনো স্বাধীনচেতা নেতার আবির্ভাব ঘটেনি যিনি বঙ্গবন্ধুর মতো মাথা উঁচু করে, সবার সঙ্গে চোখে চোখ রেখে সমানে সমান হয়ে দেশীয় সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কথা বলে উদ্ভূত পরিস্থিতির সুষ্ঠু সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমানে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তারও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সফলতা উল্লেখ করার মতো। তন্মধ্যে ভারতের সাথে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি, ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, ২০১৫ সালে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত স্থায়ী আদালতে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ হাজার পরিমাণ অঞ্চল জিতে নেয়া, ২০১২ সালে বাংলাদেশ সফলভাবে মিয়ানমারের সঙ্গেও বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমার মামলা জয় করা। বিশ্বে বাংলাদেশ সেই অল্পসংখ্যক দেশের মধ্যে একটি, যারা মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) বাস্তবায়নে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছে। এ সবই বাংলাদেশের জন্য সত্যি সুসংবাদ।
লেখক: শিক্ষার্থী, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।